বিগত অর্থবছর দেশে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। দেশে উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে পণ্যটির সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি। কিন্তু ভারতে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা দেশে দাম দ্বিগুণ করে ফেলার সুযোগ পেয়েছেন। এ সুযোগেই দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার টন পেঁয়াজ, যা আগের মাসের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।

এদিকে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এতে বাংলাদেশের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনে পেঁয়াজ আমদানির বিকল্প উৎস খোঁজার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

আমদানিকারকেরা বলছেন, মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কমপক্ষে দুই মাস লাগে। ফলে ঈদুল আজহার আগে মিসরের পেঁয়াজ আসছে না। তাঁদের মতে, পেঁয়াজের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমবে আগামী ডিসেম্বরে, যখন দেশে ও ভারতে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উৎপাদন শুরু হবে।

সরকারের তালিকায় পেঁয়াজ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসে ঢাকার বাজারে পণ্যটির দাম ১১৩ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে সর্বনিম্ন ৬০ ও সর্বোচ্চ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা এক মাস আগে ৩০-৩৫ টাকা ছিল। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা ছিল ২৫ টাকা।

কারওয়ান বাজার থেকে গতকাল পেঁয়াজ কিনে ফেরার সময় রাজাবাজারের বাসিন্দা সোবহান শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে পাইকারি দোকান থেকে ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম ২৫০ টাকা দিয়ে। এখন ৫ কেজি কিনতে লাগল ২৭৫ টাকা।’ তিনি বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া কোনো তরকারিই রান্না করা যায় না। দাম যতই হোক, মানুষকে বাধ্য হয়ে কিনতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। ঈদুল আজহায় বাড়তি প্রায় ২ লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। মোট চাহিদার প্রায় ১৭ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৭ লাখ টন মূলত ভারত থেকে আমদানি হয়। বিগত কয়েক মাস ভারতে পেঁয়াজের বাজার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে স্থিতিশীল ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অতিসম্প্রতি দেশটির কয়েকটি রাজ্যে অতিবৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যার কারণে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। প্রতিবেদনে মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং দিল্লির বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, এক মাসে ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রতিটি রাজ্যে দাম ৮০ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

ভারতের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমদানিকারক মো. মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বেঙ্গালুরুতে এখন নতুন পেঁয়াজ উঠছে। তবে বন্যায় এর আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত মৌসুমে দাম না পেয়ে কৃষকেরা আবাদও কম করেছিলেন। ভারত থেকে আমদানি করতে গতকালের বাজারদর অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৪১ টাকা খরচ পড়বে উল্লেখ করেন ওই ব্যবসায়ী।

ভারতীয় দ্য হিন্দু পত্রিকার এক খবরে গত শুক্রবার বলা হয়,  মিসরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির খবরে ভারতে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা থেমেছে। অন্যদিকে ৭ আগস্ট দেশটির কৃষিসচিব শোভানা কে পট্টনায়ক বলেন, আগামী মাস থেকে অন্ধ্র প্রদেশে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উৎপাদন শুরু হবে। তখন দাম কমবে।

রাজধানীর পেঁয়াজের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৭-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কয়েক দিন আগের তুলনায় এ দাম ভারতীয় পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ৬-৭ এবং দেশি পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ৩-৫ টাকা কম।